যৌনবাহিত রোগ-সিফিলিস থেকে বাঁচার উপায় জেনে নিন

যৌনবাহিত রোগ-সিফিলিস থেকে বাঁচার উপায় জেনে নিন 


গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায়

যৌনবাহিত রােগ


যে সব রােগ যৌন মিলনের সময় সংক্রমণের মাধ্যমে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে সে সব রােগকে যৌনবাহিত রােগ (Sexually Transmitted Diseases, STDs) বলে ।


চিকিৎসাবিদ্যার সংজ্ঞা অনুযায়ী, গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায় সংক্রমণের

ফলে লক্ষণ প্রকাশ পেলে তাকে রােগ (disease) বলে। যেহেতু অনেক সময় যৌনবাহিত রােগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না তাই এ অবস্থাকে যৌনবাহিত রােগ না বলে যৌনবাহিত সংক্রমণ (sexually transmitted infections) বলে। 


রােগের লক্ষণ প্রকাশ পাক না পাক সাধারণ মানুষের কাছে এগুলাে যৌনবাহিত রােগ নামেই বহুল পরিচিত। গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায় অনেক ধরনেরযৌনবাহিত রােগ ও সংক্রমণ রয়েছে। কেবল নিরাপদ যৌনমিলনের মাধ্যমেই এসব রােগ ও সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। যৌনবাহিত একটি রোগ হল সিফিলিস।


সিফিলিস (Syphilis)


Treponema pallidium নামক ব্যাকটেরিয়ামের সংক্রমণে সৃষ্ট যৌনবাহিত রােগকে সিফিলিস বলে।সিফিলিস এর ঔষধ এ রােগে দেহে দীর্ঘকালীন জটিলতা দেখা দেয় এবং সঠিক চিকিৎসা না করালে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে ।


সংক্রমণ প্রক্রিয়া (Mode of Transmission)


সিফিলিস আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে সৃষ্ট সিফিলিটিক ক্ষত (siphilitic sore)-এর সরাসরি সংস্পর্শে এলে জনান্তরে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে । 


সিফিলিস টেস্ট কিভাবে করবো সিফিলিটিক ক্ষত প্রধানত বহির্যৌনাঙ্গ, যােনি, পায়ু বা মলাশয়ে অবস্থান করে, কিছু দেখা যায় ঠোট ও মুখে। যৌনমিলনের ধরনের উপর (যােনি, পায়ু, মুখ) সংক্রমণের উৎস নির্ভর করে। সিফিলিসে আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলা সন্তান ভূমিষ্ঠের আগেই তার শরীরে সিফিলিস রােগের বিস্তার ঘটিয়ে দেয়। সিফিলিসের জীবাণুতে সংক্রমিত হলে সাধারণত ২১ দিনের মাথায় রােগের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে, তবে ব্যক্তি বিশেষে সময়কাল ১০-৯০ দিন হতে পারে।


সিফিলিস রোগের লক্ষণ


সিফিলিসের প্রথম লক্ষণ যেমন বেশ দেরিতে (অর্থাৎ ২১ দিন পর) প্রকাশ পায় তেমনি শেষ পর্যায়ে যেতেও অনেক সপ্তাহ, মাস বা বছর পেরিয়ে যায় ।সিফিলিস টেস্ট কিভাবে করবো লক্ষণ প্রকাশের সময়কালকে ৪টি পর্যায়ে ভাগ করা হয়।


. প্রাথমিক পর্যায় (Primary stage) : ২১ দিন পর ১টি মাত্র সিফিলিটিক ক্ষত প্রকাশিত হয়।এইচআইভি টেস্ট এটি দৃঢ়, গােল ও ব্যথাহীন ক্ষত। এটি দেখে বােঝা যায় জীবাণু কোন পথে সংক্রমিত হয়েছে। তিনথেকে ছয় সপ্তাহ পর ক্ষতপূরণ হয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ে ধাবিত হয় ।


২. মাধ্যমিক পর্যায় (Secondary Stage) : গায়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফুসকুড়ি (rash) দেখা দেওয়া এবং সিফিলিটিক ক্ষত অমসৃণ, লাল বা লালচে বাদামী দাগ হিসেবে হাত-পায়ের তালুতে আবির্ভূত হওয়া এ পর্যায়ের লক্ষণ। ক্ষত ছাড়াও জ্বর, স্ফীত লসিকা গ্রন্থি, গলাভাঙ্গা, বিভিন্ন জায়গায় চুল উঠে যাওয়া, মাথাব্যথা, ওজন কমে যাওয়া, পেশিব্যথা, ক্লান্তি প্রভৃতিও এ পর্যায়ে দেখা দেয়।


৩. সুপ্ত পর্যায় (Latent stage) : প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের লক্ষণগুলাে অদৃশ্য হলে শুরু হয় সুপ্ত পর্যায়। এ সময় আক্রান্তের দেহে কোনাে ক্ষত, ফুসকুড়ি বা অন্যান্য লক্ষণ দেখা যায় না। বছরের পর বছর এ পর্যায় অব্যাহত

থাকতে পারে।


৪. বিলম্বিত পর্যায় (Late stage) : জীবাণুতে প্রথম সংক্রমিত হওয়ার প্রায় ১০-২০ বছর পর সিফিলিস পূর্ণাঙ্গরূপে আবির্ভূত হয়। রােগের বিলম্বিত দশায় রােগীর মস্তিষ্ক, স্নায়ু, চোখ, হৃৎপিন্ড, রক্তকণিকা, যকৃত, গ্রন্থি ও সন্ধির ক্ষতি সাধন করে। ফলে পেশি সঞ্চালনে বিঘ্ন ঘটে, দেখা দেয় পঙ্গুত্ব, অন্ধত্ব, হতবুদ্ধি ও অস্থিরচিত্ত। এ অবস্থায় মানুষের মৃত্যু ঘটে।


সিফিলিস রোগ প্রতিরােধের উপায় :


সিফিলিসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে স্থায়ী সঙ্গীর সঙ্গে জীবনযাপন করা, ভিন্ন সঙ্গীর কথা চিন্তাই করা উচিৎ নয়।সিফিলিস ও গনোরিয়া রোগের লক্ষণ কিংবা কোথাও সিফিলিস রােগী আছে এমন ঘরে যাওয়া-আসা করাও নিরাপদ নয়। তা ছাড়া, অ্যালকোহল ও মাদক জাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে থাকা একান্ত বাঞ্ছনীয়, কারণ এসব পান বা সেবন যৌন আচণকে উসকে দেয়, তখন সঙ্গী নির্বাচন সঠিক নাও হতে পারে


সিফিলিস রোগোর চিকিৎসা :


সিফিলিসের লক্ষণ জানা থাকলে প্রাথমিক পর্যায়ে সহজেই চিকিৎসা করানাে সম্ভব হয়। কারও দেহে প্রাথমিক বা মাধ্যমিক পর্যায় বা প্রাক-সুপ্ত পর্যায়ের সিফিলিস জীবাণু থাকলে তাকে একটি মাত্র Benzathine Pen G

ইনজেকশন দিলেই রােগ দূর হতে পারে।সিফিলিস ও গনোরিয়া রোগের লক্ষণ সুপ্ত পর্যায়ের শেষ অবস্থায় কেউ থাকলে তাকে প্রতি সপ্তাহে একটি করে ইনজেকশন দিতে হয়। 

চিকিৎসার ফলে সিফিলিস সারবে কিন্তু দেহের ক্ষতিগ্রস্থ টিস্যুর ক্ষত পূরণ হবে না। সম্পূর্ণ না সারা পর্যন্ত যৌন মিলন থেকে নিজেকে বা অন্যকে বিরত রাখতে হবে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ