৮টি ভুল পদ্ধতি আপনার ফিটনেসকে মারাত্বক হুমকির মুখে ফেলছে।



ফিটনের সম্পর্কে ৮ টি ভুল তথ্য জেনে রাখুন

আমাদের সবার ফিটনেস সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকে সঠিক পদ্ধতি না জেনে ভুল পদ্ধতি অনুসরণ করে। এমনকি ফিটনেসের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিরাও প্রায়শই ভুল পরামর্শ দেন। অনলাইনে ফিটনেসের বিভিন্ন ভুল পদ্ধতি অনুসরণ করে লোকেরা তাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতিও করে

আপনি আপনার ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কিন্তু এর কোনও সঠিক ফলাফল পাচ্ছেন না তাহলে ধরে নিন আপনার ফিটনেস পদ্ধতিটা সম্পূর্ণ ভুল। বর্তমান বিশ্বে ফিটনেস একটি ট্রেন্ডিং বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 নিজেকে আরও আকর্ষণীয় ও চমকপ্রদ করে তুলতে কিনা করছেন। আর তা করতে গিয়ে অনেকে ভুল পদ্ধতি অবলম্বন করায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে। ফিটনেস ঠিক রাখার নিয়ে আমাদের  মাঝে ব্যাপক ভুল ধারণা রয়েছে। চলুন ফিটনেস ঠিক রাখার সম্পর্কিত কিছু ভুল ধারনা জেনে নেওয়া যাক-

১. যত ঘাম ঝড়াবেন তত ক্যালরি ঝড়বে


যত বেশি ঘাম ঝরাবেন আপনার শরীরের ক্যালরি তত খরচ হবে। এই ধারণাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ঘাম হচ্ছে মানব শরীরের জন্য একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। শরীরের উত্তাপ এর সাথে ঘামের সম্পর্ক বিদ্যমান। আপনার দেহ প্রতিদিন যে পরিমাণ তাপশক্তি উৎপন্ন করে সেটার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে এই ঘাম ঝরা।
 
ব্যায়ামের পর শরীরকে শীতল করার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হচ্ছে ঘামঝরা।ক্যালোরি খরচ হয় মূলত মাংসপেশির টানাপোড়ন অথবা নড়াচড়ার মাধ্যমে। মানব দেহের সাধারণ তাপমাত্রা 98.4 ডিগ্রী ফারেনহাইট। 

মানব শরীরের মধ্যে যেসব কোষ রয়েছে তার মধ্যে কিছু কোষ হরমোন নিঃসৃত করে আর এই হরমোনের কোষ গুলোকে বলে গ্রন্থি। তেমনি  ঘামগ্রন্থি ঝরায় ঘাম। এর সাথে ক্যালোরি খরচ এর কোন সম্পর্ক । 


২. পেশী ঠিক রাখার চাবিকাঠি হলো স্ক্রেচিং

এটি আরেকটি ভুল ধারণা। স্ক্রেচিং আপনার শক্ত পেশীকে নরম করতে সাহায্য করে। এছাড়াও পেশিশক্তি গুলোতে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি এবং চলাচলে আরামদায়ক ঘটায়। 
স্ক্রেচিং আপনার রক্তের ল্যাকটেট এর স্তর গুলির উপর প্রভাব বৃদ্ধি করে না বরং এটি আপনার পেশীকে দ্রুত রিকভার করে। পাশাপাশি আপনার শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করে। যাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি তাদের স্ক্রেচিং করা খুবই একটি কার্যকর পদ্ধতি। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা নিয়মিত স্ক্রাচিং করলে অনেক সুফল পাওয়া যায়।

৩. ট্রেডমিলে দৌড়ানোর চেয়ে বাহিরে দৌড়ানো অনেক গুণ ভালো।


এই ধারণাটি নিয়ে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। অনেক প্রশিক্ষক মনে করেন ট্রেডমিলে দৌড়ানোর চেয়ে বাহিরে নিয়মিত দৌড়ানো আপনার ফিটনেসের স্টেবিলিটি রাখে। বাস্তবে দুটি পদ্ধতির মধ্যে কিছু ভালো এবং কিছু খারাপ দিক রয়েছে।

 গবেষণায় জানা গিয়েছে ট্রেডমিলে হাটার থেকেও আপনি যদি প্রতিদিন বাহিরে হাঁটেন তাহলে আপনার শরীরের ১০ শতাংশ বেশি ক্যালোরি খরচ হয়। আপনি যদি নিয়মিত বাহিরে হাঁটাহাঁটি করেন তাহলে আপনার শরীর বাহিরের আবহাওয়ার সাথে একটি সামঞ্জস্যতা তৈরি করে আপনার শরীরকে সতেজ রাখে।

ট্রেডমিলের সুবিধা হ'ল আপনি এটিতে স্কোর বাড়াতে এবং নিয়ম অনুসারে ক্যালোরিগুলি বার্ন করতে পারেন। এটি আপনার গতি বাড়াতে এবং বিভিন্ন সময়ে এটি হ্রাস করতে সহায়তা করে।

৪. অতিরিক্ত ক্রাঞ্চস করা হলে আপনার সিক্স প্যাক হবে।


জার্নাল অফ ব্র্যাকিং অ্যান্ড কন্ডিশনিং রিসার্চ জানিয়েছে যে 24 প্রাপ্তবয়স্কদের নিয়মিত ক্রাশের শিকার হয়েছিল। ছয় সপ্তাহ পরে, এটি পাওয়া গেছে যে তাদের ছয় প্যাকগুলি বাড়েনি তবে চর্বি মোটেই কমেনি।


বাস্তবতা হচ্ছে আপনি কখনোই আপনার মেদ কমিয়ে সিক্স প্যাক করতে পারবেন না।যতক্ষন না আপনি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার না খান, আর সুগার ও চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার না করেন।

৫.. ব্যায়াম করলে ওজন কমে যাবে

আপনি যদি দিনের-পর-দিন কিছু ব্যায়াম করে যাচ্ছেন  আর মনে করছেন যে আপনার ওজন কমে যাবে তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন বরং এতে আপনার ওজন কখনোই কমবে না। অনেকে মনে করেন নিম্নোক্ত ব্যায়ামগুলোর ফলে শরীরের ওজন কমে। যেমন- হিপ ব্যায়াম, স্কোয়াটস, শরীর বাঁকানো, পুশ আপ, ব্যাক এক্সারসাইজ। বাস্তবে এগুলোর কোনটাই ওজন কমানোর ব্যায়াম নয়।

তবে, ব্যাক অনুশীলনগুলি আপনার পিছনের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে। এটি আপনার পেশীগুলির ওজন বাড়ায় না।

৬. পেটের ব্যায়ামে সিক্স প্যাক হবে।

অনেকের মাঝে আরেকটি ভুল ধারণা হচ্ছে পেটের ব্যায়াম করলেই আপনি সিক্স প্যাক পেতে পারেন। ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। বরং আপনি যদি নিম্নোক্ত পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করেন তাহলে এর থেকে ভালো ফিডব্যাক পেতে পারেন।

যেমন পর্যাপ্ত পরিমান প্রোটিন খাওয়া, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খাওয়া , ক্রাঞ্চ করা বন্ধ করা, ট্রেডমিলের জন্য সময় ব্যয় করা পরিহার, পেশীতে পর্যাপ্ত স্ট্যামিনা বাড়ানোতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা। এগুলা নিয়মিত পালন করলে ভাল সুফল পাওয়া যায়।

৭. ব্যায়ামের আগে খাওয়া


অনেক প্রশিক্ষকের মধ্যে এ নিয়ে মতামতের পার্থক্য থাকলেও গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে ব্যায়ামের আগে  পুষ্টিকর কোন খাবার যেমন শরবত কিংবা একটি কলা খাওয়া হয় তাহলে ভারী ব্যায়ামের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি এর থেকে পাওয়া যায়। এছাড়াও আপনি ব্যায়ামের আগে খাবার তালিকায় ব্রাউন ব্রেড, ফল ও দই রাখতে পারেন। 
এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও শর্করা রয়েছে যা ব্যয়াম করার সময় আপনার শরীরে ক্যালরির যোগান দেবে। তবে এর বিপরীত হলে তাতে আপনার স্বাস্থ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

৮.  যতটা সময় ধরে ব্যায়াম করা যায় ততটাই ভাল

ব্যস্ততার কারণে অনেকে প্রতিদিন ব্যায়াম করতে পারে না আর এ কারণে অনেকে মনে করেন নির্দিষ্ট একটি দিনে অনেকক্ষণ ধরে ব্যায়াম করলে শরীরের দীর্ঘ সময় ব্যায়াম না করার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়। অনেকে আবার মনে করেন ব্যায়ামাগারে যতটা সময় ব্যয় করা যায় ততটাই ভালো। 

আসলে, এটি একটি ভুল ধারণা। আপনি যদি সঠিক সময়ে এবং সঠিক নিয়মগুলির সাথে 10 মিনিট অনুশীলন করেন, তবে এটি আপনার পক্ষে যথেষ্ট। শরীরের শক্তি ফিরে পেতে এটি দীর্ঘ সময় নেয়, অন্যথায় শরীরের টিস্যুগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ