ভাইরাল হেপাটাইটিস রোগ থেকে বাঁচার উপায় জেনে নিন

ভাইরাল হেপাটাইটিস রোগ থেকে বাঁচার উপায় জেনে নিন 

হেপাটাইটিস বি থেকে মুক্তির উপায়

(ক) ভাইরাল হেপাটাইটিস (Viral Hepatitis) :


সাধারণত লিভার প্রদাহকে হেপাটাইটিস বলা হয়। ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে লিভার ভূর্দাহ হলে তাকে ভাইরাল হেপাটাইটিস বা সংক্ষেপে হেপাটাইটিস বলা হয়। এটি জন্ডিসের অন্যতম প্রধান কারণ।


পৃথিবীর মােট জনসংখ্যার প্রায় ৩% এবং বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লক্ষ লােক এ রােগে আক্রান্ত। ৮৫% ক্ষেত্রে এ ভাইরাস লিভারে স্থায়ী আক্রমণ গড়ে তােলে, যা ১০-১৫ বছরের মধ্যে জটিলতা দেখা দেয় । হেপাটাইটিস বি থেকে মুক্তির উপায়


হেপাটাইটিস রােগের কারণ :


হেপাটাইটিস রােগের কারণ হেপাটাইটিস-B ভাইরাস (HBV)। এছাড়া হেপাটাইটিস-A ভাইরাস (HAV); হেপাটাইটিস-C ভাইরাস (HCV) যাকে বলা হয় ‘তুষের আগুন’ এবং আক্রান্ত রােগী সুচিকিৎসার অভাবে অধিকাংশ সময় মারা যায়।


হেপাটাইটিস-D ভাইরাস (HDV) ও হেপাটাইটিস-E ভাইরাস (HEV) দিয়েও লিভার প্রদাহ হয়ে থাকে। অধিকাংশ হেপাটাইটিসই হেপাটাইটিস-B ভাইরাসের আক্রমণে হয়ে থাকে। হেপাটাইটিস-C অবশ্য হেপাটাইটিস-B অপেক্ষা অধিক মারাত্মক।


হেপাটাইটিস-B ভাইরাস একটি DNA ভাইরাস। এর DNA দ্বিসূত্রক এবং বৃত্তাকার। এই ভাইরাসে প্রােটিন আবরণের ওপর আর একটি আবরণ থাকে। এ ভাইরাস বিভিন্নভাবে ছড়াতে পারে। যেমন আক্রান্ত মায়ের বুকের দুধপানের মাধ্যমে শিশু আক্রান্ত হতে পারে। এ আক্রান্ত ব্যক্তির ইনজেকশনের সিরিঞ্জের মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তির দেহে এ ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে।


অনিরাপদ যৌন মিলনের মাধ্যমেও এ ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। এছাড়া মাইটোমেগালাে ভাইরাস, এপিস্টেইন বার ভাইরাস, হারপিস সিমপ্লেক্স, হারপিস জোস্টার ভাইরাস কোনাে সময় শিশুর হেপাটাইটিস সৃষ্টি করে। হেপাটাইটিস বি থেকে মুক্তির উপায়


হেপাটাইটিস রােগের লক্ষণ : 


রক্তের মাধ্যমে এই রােগ দেহে প্রবেশ করে এবং লিভারে নীত হয় ও লিভারকে আক্রমণ করে। এই

ভাইরাস কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম দিকে কোনাে লক্ষণই প্রকাশ পায় না। এর ইনকিউবেশন পিরিয়ড (সুপ্তিকাল) ৪৫-১৮০ দিন। 


ক্রমশ জ্বর, মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব, দুর্বল বােধ , পাতলা পায়খানা, হাড়ের গিটে ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়। 


পরবর্তীতে প্রস্রাব হলুদ হয়, চোখের সাদা অংশ হলুদ দেখায়, পেটে ও পায়ে পানি জমা হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি সবসময় অস্বস্তি অনুভব করে। শেষ পর্যন্ত লিভার সিরােসিস, লিভার ক্যান্সার হেপাটাইটিস B ও C ভাইরাসের সংক্রমণে হয়ে থাকে। হেপাটাইটিস B নির্ণয়ের জন্য রক্তের এইচবি সারফেস অ্যান্টিজেন (HBsAg) পরীক্ষা করতে হয়। হেপাটাইটিস বি থেকে মুক্তির উপায়


হেপাটাইটিস নিয়ন্ত্রণ/প্রতিকার :


 রােগলক্ষণ প্রকাশ পেলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার। সাধারণত এর কোনাে

কার্যকরী চিকিৎসা নেই। নিয়মিত চিকিৎসায় সুস্থ থাকা যায় কিন্তু সম্পূর্ণ আরােগ্য হওয়া যায় না। এর মূল চিকিৎসা হলাে রােগীকে ১০-১২ দিন পূর্ণ বিশ্রামে রাখা। গ্লুকোজের সরবত খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়। অড়হড় পাতা, উঁই আমলার

পাতা ইত্যাদির রস খাওয়ায়ে উপকার পেয়েছেন বলেও অনেকে দাবি করেছেন । Amoxycillin, Metronidazole, ভিটামিন-সি প্রভৃতি ওষুধ খাওয়াতে হবে। হেপাটাইটিস বি থেকে মুক্তির উপায়


হেপাটাইটিস প্রতিরোধ :


 প্রতিরােধের একমাত্র উপায় হলাে প্যান্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন গ্রহণ করা। হেপাটাইটিস-B-এর ভ্যাকসিন ডােজ এটি। প্রথম ৩টি একমাস পরপর এবং ৪র্থটি প্রথম ডােজ থেকে এক বছর পর। পাঁচ বছর পর বুস্টার ডােজ নিতে হয়। এর র্মাধ্যমে শরীরে হেপাটাইটিস-B ভাইরাসের বিপক্ষে প্রতিরােধ ব্যব গড়ে ওঠে। রক্ত পরীক্ষা করে এইচবি সারফেস অ্যান্টিজেন (HBsAg) পজিটিভ হলে B-ভাইরাস আক্রান্ত বলে ধরে নেয়া হয় এবং তাকে ভ্যাকসিন দেয়া যায়। হেপাটাইটিস বি থেকে মুক্তির উপায়


মা থেকে শিশুতে এই রােগ ছড়াতে পারে, তাই সাবধান হতে হবে। রক্ত দেওয়া-নেওয়ায় সাবধান হতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌন মিলন করা যাবে না। সর্বক্ষেত্রে ডিসপােজিবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করা। সেলুনে সেভ করা পরিহার করতে

হবে। প্রতিজনের জন্য আলাদা আলাদা ব্লেড ব্যবহার করা উচিত। ব্যক্তিগত টয়লেট্রিজ দ্রব্য যেমন টুথব্রাশ, রেজার, নেইল কাটার ও রক্ত গ্রহণের যন্ত্রপাতি অন্য কেউ ব্যবহার না করা। হেপাটাইটিস বি থেকে মুক্তির উপায়


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ