স্নায়ুবিক বৈকল্যজনিত শারীরিক সমস্যা সম্পর্কে জেনে রাখুন

স্নায়ুবিক বৈকল্যজনিত শারীরিক সমস্যা সম্পর্কে জেনে রাখুন


স্নায়ুবিক বৈকল্যজনিত শারীরিক সমস্যা সম্পর্কে জেনে রাখুন

প্যারালাইসিস


শরীরের কোনাে অংশের মাংসপেশীর কার্যাবলি নষ্ট হওয়াকে প্যারালাইসিস বলে। সাধারণত মস্তিষ্কের কোনাে অংশের ক্ষতির কারণে ঐ অংশের সংবেদন গ্রহণকারী পেশিগুলাে কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে।

একজনের আংশিক কিংবা সম্পূর্ণ প্যারালাইসিস হতে পারে, যাতে শরীরের একপাশের কোনাে অঙ্গ অথবা উভয়পাশের অঙ্গের কার্যকারিতা নষ্ট হয়, যেমন, দুই হাত ও পায়ের প্যারালাইসিস ।


প্যারালাইসিসের কারণ : 


প্যারালাইসিস সাধারণত মস্তিষ্কের স্ট্রোকের কারণে হয়। এছাড়া মেরুদণ্ডের বা ঘাড়ের সুষুম্নাদণ্ডে আঘাত বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে প্যারালাইসিস হতে পারে। স্নায়ু রােগ, সুষুম্নাদণ্ডের ক্ষয় রােগও প্যারালাইসিস এর কারণ হতে পারে।


এপিলেপসি বা মৃগীরোগ


এপিলেপসি মস্তিষ্কের একটি রােগ যাতে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর খিচুনী বা কাপুনি দিতে থাকে। অনেকক্ষেত্রে রােগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এই রােগকে মৃগীরােগ ও বলা হয়। অনেকক্ষেত্রে এই রােগের কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ করেই

সাময়িকভাবে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, শরীর কাপুনি ও খিচুনি দিতে দিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। রােগাক্রান্ত অবস্থায় পানিতে পড়লে নিজ শক্তিতে উঠতে পারে না, ফলে ডুবে মারা যায়।

এপিলেপসির মূল কারণ এখনও সম্পূর্ণভাবে জানা যায়নি। তবে মস্তিষ্কের অবস্থাগত কারণে এপিলেপসি হয়ে থাকে। ইসকেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত রােগীদের মৃগী রােগ দেখা দেয়। 


মাথায় আঘাতজনিত কারণে ম্যানিনজাইটিস,

এনসেফালাইটিস, এইডস্, জন্মগত মস্তিষ্কের বিকৃতি, টিউমার ইত্যাদি কারণেও এপিলেপসির বা মৃগীরোগের উপসর্গ দেখা দেয়।


এপিলেপসি যে কোনাে বয়সে হতে পারে, তবে ৫ থেকে ২০ বছর বয়সে মৃগী রােগের ব্যাপকতা বেশি দেখা যায় ।


এপিলেপসি বা মৃগীরোগীর জীবনধারার ব্যবস্থাপনা


খেঁচুনির নিয়ন্ত্রণ জরুরী কারণ এটি বিপদজনক এবং জটিল সমস্যার সৃষ্টি করা। 


-নিয়মিত ঔষুধ গ্রহণ করা। ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া ওষুধ গ্রহণ এড়িয়ে যাবেন না।


-খেঁচুনি বা মৃগীরোগ শুরুর কারণ খুঁজে বার করা। খুব সাধারণ কারণগুলো হলো মদ্যপান, অনিদ্রা, চাপ, উজ্জ্বল আলো, জোরে আওয়াজ জরা ইত্যাদি।


-খিঁচুনি খুব ঘন ঘন হয় তবে  গাড়ি চালানো, সাঁতার কাটা এবং রান্না করা থেকে বিরত থাকুন। এইগুলি করার সময় খিচুনি হলে তা খুবই ক্ষতিকারক হবে।


-বাড়ির আসবাবপত্র গুলোর কোণগুলো যেন মসৃণ হয়।


-সাঁতার কাটার সময় এমন সঙ্গী সাথে রাখুন যে আপনার খিঁচুনি আরম্ভ হলে আপনাকে উদ্ধার করতে পারবে।





পারকিনসন রােগ


পারকিনসন রােগ মস্তিষ্কের এমন এক অবস্থা যাতে হাতে ও পায়ের কাঁপুনী হয় এবং আক্রান্ত রােগী নড়াচড়া, হাঁটাহাটি করতে অপারগ হয়। এ রােগ সাধারণত ৫০ বছরের বয়সের পরে হয়। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে যুবক যুবতীদের হতে

পারে। এই ক্ষেত্রে রােগটি তার বংশে রয়েছে বলে ধরা হয়। স্নায়ু কোষ এক ধরনের নির্যাস তৈরি করে যাকে ডােপামিন বলে। ডােপামিন শরীরের পেশির নড়াচড়ায় সাহায্য করে।


পারকিনসন রােগাক্রান্ত রােগীর মস্তিষ্কে ডােপামিন তৈরির কোষগুলাে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। ডােপামিন ছাড়া ঐ স্নায়ু কোষগুলি পেশি কোষগুলিকে সংবেদন পাঠাতে পারে না। ফলে মাংসপেশি তার কার্যকারিতা হারায়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে পারকিনসনের কারণে রােগীর মাংসপেশি আরও অকার্যকর হয়ে উঠে, ফলে রােগীর চলাফেরা, লেখালেখি ইত্যাদি কাজ করা কষ্টকর হয়ে পড়ে।


পারকিনসন রােগ সাধারণত ধীরে ধীরে প্রকট রূপে দেখা দেয়। রােগী প্রাথমিক অবস্থায় হালকা হাত বা পা কাঁপা অবস্থায় থাকে। ফলে চলাফেরা বিঘ্নিত হয়। এছাড়াও চোখের পাতার কাঁপুনি, কোষ্ঠকাঠিন্য, খাবার গিলতে কষ্ট হওয়া,

সােজাসুজি হাঁটার সমস্যা, কথা বলার সময় মুখের বাচনভঙ্গি না আসা অর্থাৎ মুখ অনড় থাকা, মাংসপেশিতে টান পড়া বা ব্যথা হওয়া, নড়াচড়ায় কষ্ট হওয়া যেমন চেয়ার থেকে উঠা কিংবা হাঁটতে শুরু করার সময় অসুবিধে দেখা দেয়।

ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি গ্রহণ, পরিমিত খাদ্য গ্রহণ ও সুস্থ জীবন যাপন করার মাধ্যমে রােগী অনেকটা সুস্থ থাকে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ