ম্যালেরিয়া রোগ প্রতিকার ও টিকা

ম্যালেরিয়া রোগ প্রতিকার ও টিকা 

ম্যালেরিয়া রোগ প্রতিকার ও টিকা

ম্যালেরিয়া

ম্যালেরিয়া বিশ্বের প্রাচীনতম রোগগুলোর অন্যতম।ম্যালােরিয়া হচ্ছে Anopheles মশাকীবাহিত এক ধরনের জ্বররোগ। এ রোগে রক্তের লোহিত কণিকা ধ্বংস হয়, তাই রক্তস্বল্পতা বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। উপযুক্ত চিকিৎসা না পেলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার



ম্যালেরিয়ার প্রতিকার 


ম্যালেরিয়া যেহেতু মশক বাহিত একটি রােগ। তাই মশকী প্রতিরোধের মাধ্যমে এ রোগ হতে মুক্ত থাকা সম্ভব। 


ম্যালেরিয়া প্রতিকার তিনতাবে হতে পারে; 


যথা- (ক) মশক নিধন, (খ) মশকী হতে আত্মরক্ষা (গ) চিকিৎসা।


(ক) মশক নিধনঃ


মশককুলের বংশ পরিবেশ এতে নিমূল করা প্রায় অসম্ভব । কিন্তু নিম্নলিখিত পন্থা অবলম্বন করে এদের বিস্তার রোধ করা যায়-


পরিষ্কার রাখা, যেখানে সেখানে পানি জমতে না দেয়া, বাড়ির আশেপাশে লােপড়, জঙ্গল কেটে ফেলার কাপ,


(i) প্রজননক্ষেত্র ধংসঃ মশকীরা বদ্ধ পচা পানিতে ডিম পাড়ে। তাই বাড়ির আশেপাশের পরিত্যক্ত ঝোপ-ঝাড় জঙ্গল কেটে ফেলার মাধ্যমে মশকীর বসবাস ও প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করা সম্ভব। ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার



(ii) লার্ভা ও পিউপা ধ্বংস করাঃ


পচা পানিতে ডিম ফুটে মশাকীর লার্ভা ও পিউপা দশা সৃষ্টি করে। পানিতে কেরােসিন বা পেট্রোল জাতীয় পদার্থ ছিটিয়ে দিলে এরা অক্সিজেনের অভাবে মারা পড়ে। এছাড়া বিএইচসি, ডায়েলড্রিন ইত্যাদি কীটনাশক পানিতে ছিটিয়ে দিলে মশকীর লার্ভা ও পিউপা মারা যায়। পানিতে জুভেনাইল হরমোন ছিটিয়ে দিলে, লার্ভাগুলাের রূপান্তর ব্যাহত হয় ফলে এরা পূর্ণাঙ্গ মশকীতে রূপান্তরিত হতে পারে না।


উপরােক্ত সবগুলাে পদ্ধতিই কমবেশি পানি তথা পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। তাই যে সকল জলাশয়ে লার্ভা বা পিউপা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ঐ সকল জলাশয়ে গাপ্পি, কই, খলসে, তেলাপিয়া পুঁটি, টাকি ইত্যাদি জাতীয় লার্ভিভােরাস মাছ চাষ করলে এরা মশকীর লার্ভা ও পিউপাগুলােকে ভক্ষণ করে। এতে মশক নিধনের পাশাপাশী পরিবেশও থাকে দূষণমুক্ত। ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার


(iii) পূর্ণাঙ্গ মশককুল নিধনঃ


ফগিং মেশিনের মাধ্যমে সালফার ডাই-অক্সাইডের ধােয়া সৃষ্টি করে মশা তাড়ানাে বা মেরে ফেলা সম্ভব। এছাড়া বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ছিটিয়ে বা রেডিয়েশন এর মাধ্যমে বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করে মশকীকুলকে ধ্বংস করা যায়।

(খ) মশকী হতে আত্মরক্ষাঃ


ঘরের  দরজা-জানালায় মাশকীরােধী নেট ব্যবহার করে মশকীর দংশন হতে আত্মরক্ষা করা যায়। এছাড়া কয়েল বা বিভিন্ন ধরনের স্প্রে ব্যবহার করা বা দেহের অনাবৃত অংশে বিশেষ ধরনের ক্রিম বা লােশন লাগানাের মাধ্যমে মশকীর দংশন হতে বাঁচা যায়। শয়নের সময় মশারি ব্যবহার এবং সন্ধ্যায় ধূপের ধোয়া প্রয়ােগ করা। ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার


(গ) চিকিৎসাঃ


ম্যালেরিয়া রােগীকে অবশ্যই উন্নত চিকিৎসা প্রদান করা আবশ্যক। রােগ শনাক্ত করা ও উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদান করলে ম্যালেরিয়া রােগ হতে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। সিনকোনা গাছের বাকল হতে তৈরি কুইনাইন ম্যালেরিয়া নিরাময়ের মূল ওষুধ। এ কুইনাইন দ্বারাই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরি হয়েছে। যেমনঃক্লোরােকুইন, নিভাকুইন, কেমােকুইন, অ্যাভলােক্লোর, প্যালাড্রিন ইত্যাদিসহ ম্যালেরিয়া পরজীবী ধ্বংসের ভালাে মানের বেশ কিছু ঔষুধ বাজারে পাওয়া যায়। এছাড়া আক্রান্ত রােগীকে যাতে মশকী দংশন করতে না পারে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক, নতুবা দ্রুত রােগের বিস্তার ঘটতে পারে।


ম্যালেরিয়ার টিকা : দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর গবেষণার পর অবশেষে আবিস্কৃত হয়েছে বিশ্বের

প্রথম ম্যালেরিয়া প্রতিষেধক টিকা “Mosquirix” যা RTS,S নামেও পরিচিত। European Medicine Agency (EMA) ইতােমধ্যেই এ Vaccine-কে স্বীকৃতি দিয়েছে। গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন ও PATH Malaria নামক প্রতিষ্ঠানদ্বয় এ যুগান্তকারী আবিষ্কারে নেতৃত্ব দিয়েছে। চার ডােজের এ টিকা Plasmodium falciparun জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর অ্যান্টিবডি উৎপাদনে সক্ষম। উল্লেখ্য যে, আফ্রিকার সাব-সাহারান অঞ্চলের শিশুরা এ পরজীবী কর্তৃক সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় এবং এতে এদের মৃত্যুর হারও বেশি। তবে বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার প্রভৃতি সাবট্রপিক্যাল অঞ্চলের দেশগুলাে এ রােগের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে পরিগণিত। ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ