স্থূলতার কারণ ও চিকিৎসা
স্থূলতা
স্থূলতার ব্যাপকতায় সারা পৃথিবীর চিকিৎসা ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে আজ সুলতা নিয়ে আলােচনা হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি শাখাও সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের যে শাখায় সুলতার কারণ, প্রতিরােধ, চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার সম্বন্ধে আলােচনা করা হয় তাকে বেরিয়াট্রিকস (Bariatrics) বলে। স্থূলতার কারণে যে সব রােগ হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে-করােনারি হৃদরােগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, ক্যান্সার (স্তন, কোলন), উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, যকৃত ও পিত্তথলির অসুখ, স্লিপ অ্যাপনিয়া, অস্টিও-আথ্রাইটিস, বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি। স্থূলতা কমানোর উপায়
স্কুলতার কারণ
ব্যক্তি পর্যায়ে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ, কিন্তু পর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রম না করাকে স্থূলতার প্রধান কারণ হিসেবে চিহিত করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে, সামাজিক পর্যায়ে সুলভ ও মজাদার খাবার, গাড়ীর উপর নির্ভরতা বেড়ে যাওয়া এবং উৎপাদন যন্ত্রের ব্যাপক ব্যবহারকে স্থূলতা বৃদ্ধির কারণ বলে মনে করা হয়। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা যে সব কারণকে স্থূলতার জন্য বিশেষভাবে দায়ী করেছেন তা নিচে উল্লেখ করা হলাে। স্থূলতা কমানোর উপায়
১. জিনগত : সফল বিপাক এবং দেহে মেদ সঞ্চয় ও বিস্তারের ক্ষেত্রে গুচ্ছ জিন ভূমিকা পালন করে। স্থূলকায় বাবা-মায়ের সন্তান প্রায় ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে স্থূলকায় হয়। নিম্ন বিপাক হার এবং জিনগত সংবেদনশীলতা স্থূলতার কারণ
হয়ে দাঁড়ায় ।
২.পারিবারিক জীবনযাত্রা : পরিবারের জীবনযাত্রার উপর স্থূলতা প্রকাশ অনেকখানি নির্ভর করে। খ্যাদ্যাভ্যাস পারিবারিকভাবেই গড়ে উঠে। চর্বিযুক্ত ফাস্টফুড (বার্গার, পিজা ইত্যাদি) খাওয়া, ফল, সনজি ও অপরিশােধিত কার্বোহাইড্রেট (লাল চালের ভাত) না খাওয়া, অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় পান করা; দামী রেস্তোরায় খাওয়ার আগে ক্ষুধাবর্ধক ও খাওয়ার শেষে চর্বি ও চিনিযুক্ত ডেসার্ট (dessert) খাওয়া।
৩. আবেগ : বিষন্নতা, আশাহীনতা, ক্রোধ, একঘেঁয়েমি-জনিত বিরক্তি, নিজেকে ছােট ভাবা কিংবা অন্য কারণে অতিভােজন করার ফলে স্থূলতা দেখা দিতে পারে ।
৪.কর্মক্ষেত্র : চাকুরিজীবীদের ক্ষেত্রে ঠায় বসে থেকে কাজ করা এবং সহকর্মীদের চাপে ফাস্টফুড বা এ জাতীয় খাবার খাওয়া। কাজ শেষে পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে না চেপে গাড়ি করে বাসায় ফেরা।
৫.মানসিক আঘাত ও দুঃখজনক ঘটনাবলী, যেমন-শৈশবকালীন শারীরিক বা মানসিক অত্যাচার; পিতা-মাতা হারানাের বেদনা; কিংবা বৈবাহিক বা পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদি অতিভােজনকে উসকে দেয় ।
৬.বিশ্রাম : বিশ্রামের সময় বাসায় বসে রিমােট-কন্ট্রোলড কেবল টিভি দেখা, ইন্টারনেট ব্রাউজ করা বা কম্পিউটারে গেম খেলার কারণে কায়িক পরিশ্রমের অভাবে স্থূলতা দেখা দেয়।
৭.লিঙ্গভেদ : গড়পরতায় নারীর চেয়ে পুরুষদেহে বেশি পেশি থাকে। পেশি যেহেতু অন্যান্য টিস্যুর চেয়ে বেশি ক্যালরি ব্যবহার করে (এমনকি বিশ্রামের সময়ও) পুরুষ তাই নারীর চেয়ে বেশি ক্যালরি ব্যবহার করে। এ কারণে নারীপুরুষ একই পরিমাণ আহার করলেও নারীদেহে মেদ জমার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৮.গর্ভাবস্থা : প্রতিবার গর্ভধারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীদেহে ৪-৬ পাউন্ড ওজন বেড়ে যায় ।
৯.নিদ্রাহীনতা : রাতে ৬ ঘন্টার কম ঘুম হলে দেহে হরমােনজনিত পরিবর্তন ঘটে ক্ষুধাগ্রতা বেড়ে যায় ফলে বেশি পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করায় স্থূলতার সৃষ্টি হয় ।
১০.শিক্ষার অভাব : সুস্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা না থাকা, সুষম খাদ্য সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব, স্থূলতার ক্ষতিকর প্রভাব
সম্পর্কে না জানা ইত্যাদি কারণে স্থূলতা দেখা দেয়।
১১.অসুখ : পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম হলে নারীদেহে স্থূলতা দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া, কুসিং সিনড্রোম (Cushing's syndrome), হাইপারথাইরয়েডিজম (Hyperthyroidism) হলেও স্থূলতা হতে পারে ।
১২.কতক ওষুধ : কিছু ওষুধ স্থূলতার সম্ভাবনাকে উসকে দিতে পারে, যেমন-কার্টিকোস্টেরয়েডস, অবসন্ন দূর করার ওষুধ (অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস), জন্মবিরতিকরণ বড়ি প্রভৃতি। তাছাড়া ইনসুলিন ও কিছু ডায়াবেটিক প্রতিষেধক ওষুধও
স্থূলতা সৃষ্টি করে। স্থূলতা কমানোর উপায়
উল্লেখিত আচরণ-কেন্দ্রিক বিষয়গুলাে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ, পালন ও অনুসরণ করতে হবে।
স্থূলতাজনিত ঝুঁকির মধ্যে কেউ থাক বা না থাক সবারই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। স্থূলতা প্রতিরােধের জন্য নিচে।
নিয়মিত ব্যায়াম : সপ্তাহে অন্তত ১৫০-২৫০ মিনিট দ্রুত হাটা বা সাঁতার কাটার অভ্যাস করতে হবে।
স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যগ্রহণ : কম ক্যালােরি ও পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল, সজি ও গােটা শস্য দানা গ্রহণ করতে হবে।
খাদ্য নিয়ন্ত্রণ : চর্বিময় খাবার, মিষ্টিসমৃদ্ধ আহার গ্রহণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অ্যালকোহল গ্রহণ নিষিদ্ধ করতে হবে।
লােভনীয় খাবার পরিহার : লােভনীয় খাবারের দিকে হাত বাড়ানাে ঠিক নয়। ভূক্তভােগীরা যেন আহার গ্রহণের সময় তাদের জন্য নির্ধারিত খাবার তালিকা কঠোরভাবে মেনে চলেন সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
দেহের ওজন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা : প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত অন্তত একবার নিজের ওজন মেপে দেখতে হবে রুটিন অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণের প্রভাব কতখানি সফল হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী ফল পেতে হলে খাদ্য ও ব্যায়াম সংক্রান্ত তালিকার প্রতি অটল ও বিশ্বস্ত থাকতে হবে।
চিকিৎসা: Orlistat (Xenical), Lorcaserin (Belviq), Phentermine (Suprenza) চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহৃত হয়ে থাকে। স্থূলতা প্রতিকারে মানুষ আজ অস্ত্রোপচারেও পিছপা হচ্ছে না। স্থূলতা কমানোর উপায়
0 মন্তব্যসমূহ