ডেঙ্গু জ্বরের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নিন
ডেঙ্গু রােগের কারণঃ
ডেঙ্গু (প্রকৃত উচ্চারণ ডেঙ্গ) একটি ভাইরাসঘটিত রােগ। এই ভাইরাসের জীবাণুর নাম
ফ্ল্যাভিাইরাস' বা ডেঙ্গু ভাইরাস। এটি একটি RNA ভাইরাস। এই ভাইরাসের বাহক হলাে Aedes aegypti L. নামক মশকী (স্ত্রী মশা) আর এর পােষক দেহ হলাে মানুষ। প্রতি বছর সারা বিশ্বে প্রায় ১০ কোটি মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়।
ডেঙ্গু রােগের লক্ষণঃ
সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরঃ
প্রথমে শীত শীত ভাব হয়ে হঠাৎ প্রচণ্ড জ্বর দেখা দেয়। জ্বর ১০৩-১০৫ ফারেনহাইট হয়ে থাকে। সাধারণত স্ত্রী ডেঙ্গু মশা কামড়ানাের ২-৭ দিন পর জ্বর দেখা দেয়। ডেঙ্গু জ্বরে রােগীর তীব্র মাথা ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেট ব্যথা, পাল ব্যথা ও গলা ব্যথা হয়। রােগীর সমস্ত শরীরে (মাংসপেশি, পিঠ, কোমর,
ঘাড়, হারে জোড়ায় জোড়ায়) ব্যথা হয়। মেরুদণ্ডের ব্যথাসহ কোমরে ব্যথা এই রােগের বিশেষ লক্ষণ। শরীরে লালচে রঙের রেশ (ফুসকুড়ি) দেখা দিতে পারে। বমি বমি ভাব ও খাবারে অরুচি হতে পারে । মারাত্মক পর্যায়ে পৌছালে রক্ষক্ষরণ (bleeding) হয়।
হেমােরেজিক ডেঙ্গুজ্বর :
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরে জটিলতা থেকে হেমােরেজিক ডেঙ্গুজ্বর দেখা দেয়। এতে কয়েকদিন রােগীর মাক মুখ, দাঁতের মাড়ি ও ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ দেখা দেয়। পায়খানার সাথে রক্ত যেতে পারে, রক্ত বমি পারে, চোখের কোণে রক্ত জমাট হতে পারে। রক্তে প্লেটিলেট (অণুচক্রিকা) ভীষণ হ্রাস পায় এবং রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না।সঠিক চিকিৎসা না হলে মৃত্যু ঘটতে পারে।
ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম : হেমােকনসেনট্রেশন ঘটতে দেখা যায় ।
তিন ধরনের ডেঙ্গু জ্বরের মধ্যে হেমােরেজিক ডেঙ্গুজ্বর ও ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম অত্যন্ত মারাত্মক।
ডেঙ্গু রােগ নির্ণয় :
সেরােলজি : রক্ত পরীক্ষায় IgM অ্যান্টিবডি উপস্থিত থাকতে পারে অথবা তীব্র সংক্রামিত রক্তে অ্যান্টিবডির পরিমাণ চার গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
প্লেটিলেট পরীক্ষা : রক্তের অনুচক্রিকার সংখ্যা ১৫০০০০/mm এর অনেক নিচে নেমে আসে।
সেল কালচার : রক্ত কণিকা কালচার করেও ভাইরাস শনাক্ত করা যায় ।
ডেঙ্গু রোগ প্রতিকার/চিকিৎসা :
ডেঙ্গুজ্বরে রােগীতে এসপিরিন জাতীয় ওষুধ মারাত্মক পরিণতি দেখা দিতে পারে, তাই এসপিরিন জাতীয় ওষুধ দেয়া যাবে না। ব্যথা ও জ্বর কমানাের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দিতে হবে। রক্তের সাম্যতা রক্ষার জন্য প্লেটিলেট ট্রান্সফিউশন এর প্রয়ােজন পড়ে। রােগীকে প্রচুর পানি, ফলের রস ও তরল খাবার দিতে হবে। মাথায় পানি ঢালা, গায়ের ঘাম মুছে দেয়া, ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর স্পঞ্জ করে দেয়া রােগীর জন্য ফলদায়ক হয়। দুগ্ধ পােষ্য শিশুদের অবশ্যই মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। এছাড়া গর্ভবতী মায়েদের ডেঙ্গু হলে অন্যান্য রােগীর মতােই যত্ন নিতে হবে। রােগীর অবস্থা জটিল হলে অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ :
ডেঙ্গু মশা নিধন করাই প্রতিরােধের প্রধান উপায়। এই মশা দিনের বেলায় কামড়ায়, কাজেই দিনের
বেলায় মশার কামড় থেকে বাঁচতে হবে। রােগ প্রতিরােধে দিনের বেলায় মশারী টানিয়ে ঘুমানাে, মশার কয়েল অথবা ইলেকট্রিক ভ্যাপার ম্যাট ব্যবহার করতে হবে, যাতে মশা কামড়াতে না পারে। এই মশা ময়লা পানিতে জন্মায় না, বাড়ির
আশপাশে বিভিন্ন কনটেইনারে (ফুলের টব, ভাঙ্গা হাড়ি পাতিল, ডাবের খােসা, ড্রাম ইত্যাদি) রক্ষিত বা সঞ্চিত পরিষ্কার পানিতে জন্মায়, তাই পানির এসব উৎস ধ্বংস করতে হবে অর্থাৎ পানি জমতে না দেয়া। পূর্ণাঙ্গ মশা নিধনের জন্য নিয়মিত
পতঙ্গনাশক স্প্রে করে রােগ প্রতিরােধ করা যায়। সম্প্রতি আমেরিকার ফ্লোরিডাতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তিতে পতঙ্গনাশক ছাড়াই ডেঙ্গু মশা নিধনের ব্যবস্থা আবিষ্কৃত হয়েছে।
যদি এই পোস্টটি আপনার ভাল লেগে থাকে তবে আপনার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। নিজে সুস্থ থাকুন অন্যদেরও সুস্থ রাখুন।
0 মন্তব্যসমূহ