খনিজ লবণের উপকারীতা ও অভাবজনিত রোগ সম্পর্কে জেনে নিন
খনিজ লবণ
ভাত এবং তরকারির সাথে আমরা প্রত্যহ খাবার লবণ খাই, এছাড়া আরও অনেক প্রকার লবণ আছে যা আমাদের দেহের জন্য অতীব প্রয়ােজন। খাদ্যে খনিজ লবণ, আমিষ, শর্করা, স্নেহ পদার্থের মতাে দেহে তাপ উৎপন্ন করে না। কিন্তু দেহকোষ ও দেহে তরলের জন্য খনিজ লবণ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।
ক্যালসিয়াম, সােডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ক্লোরিন, আয়ােডিন, লৌহ, সালফার ইত্যাদি লবণ জাতীয় দ্রব্য খাদ্যের সাথে দেহে প্রবেশ করে ও দেহ গঠনে সাহায্য করে। এসব উপাদান দেহে মৌলিক উপাদান হিসেবে থাকে না, অন্য পদার্থের সঙ্গে জৈব ও অজৈব যৌগরুপে থাকে।।
প্রধানত দুই ভাবে খনিজ লবণ দেহে কাজ করে। যথা- দেহ গঠন উপাদানরূপে ও দেহ অভ্যন্তরীণ কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।
মাংস, ডিম, দুধ, সবুজ শাকসবজি এবং ফল খনিজ লবণের প্রধান উৎস।
খনিজ লবণ দেহ গঠন ও দেহের অভ্যন্তরীণ কাজ নিয়ন্ত্রণ করে, অস্থি, দাঁত, এনজাইম ও হরমােন গঠনের জন্য খনিজ লবণ অপরিহার্য উপাদান, স্নায়ু উদ্দীপনা ও পেশি সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে, দেহের জলীয় অংশে সমতা রক্ষা করে ও বিভিন্ন এনজাইম সক্রিয় রাখে।
খনিজ লবণের উৎস ও প্রয়োজনীয়তা
১.ক্যালসিয়ামঃ
খাদ্যের উৎসঃ দুধ, মাংস ও সবুজ শাকসবজি।
প্রয়োজনীয়তাঃ দাঁত ও হাড়ের সুস্থতায়, রক্ত জমাট বাঁধতে ও স্নায়ু ব্যবস্থার সুষ্ঠু কাজ সম্পাদনে সহায়তা করে।
২.ফসফরাস লবণঃ
খাদ্যের উৎসঃ দুধ, মাংস, ডিম, ডাল ও সবুজ শাকসবজি।
প্রয়োজনীয়তাঃসুস্থ দাঁত ও হাড়ের জন্য।
৩.লোহঃ
খাদ্যের উৎসঃমাংস, ফল ও সবুজ শাকসবজি।
প্রয়োজনীয়তাঃ রক্তের লাল কণিকা বৃদ্ধি করে রক্তস্বল্পতা দূর করে।
৪.আয়োডিনঃ
খাদ্যের উৎসঃ সামুদ্রিক শৈবাল, সামুদ্রিক মাছ ও মাছের তেল।
প্রয়োজনীয়তাঃ থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের মাধ্যমে গলগন্ড রোগ মুক্ত রাখে।
৫.সোডিয়ামঃ
খাদ্যের উৎসঃ সাধারণ লবণ, নোনা ইলিশ, পনির ও নোনতা বিস্কুট।
প্রয়োজনীয়তাঃ দেহের অধিকাংশ কোষে এবং দেহরসের জন্য এর স্বল্পতা দেহে আড়ষ্ট ভাব আনে।
৬.ম্যাগনেসিয়ামঃ
খাদ্যের উৎসঃ সবুজ শাকসবজি।
প্রয়োজনীয়তাঃ এনজাইম বিক্রিয়া ও দাঁতের শক্ত আবরণ গঠনে ভূমিকা রাখে।
৭.ক্লোরিনঃ
খাদ্যের উৎসঃ খাবার লবণ।
প্রয়োজনীয়তাঃ দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা ও হাইড্রোক্লোরিক এসিড তৈরি করা।
৮.পটাসিয়ামঃ
খাদ্যের উৎসঃ মাছ, দুধ, ডাল, আখের গুড় ও শাকসবজি।
প্রয়োজনীয়তাঃ পেশি সংকোচনে ভূমিকা রাখে।
মানবদেহে খনিজ লবণের প্রয়ােজনীয়তা
ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড় গঠনে, রক্ত জমাট বাধতে, স্নায়ু ব্যবস্থায় সুষ্ঠু কাজ সম্পাদনে সহায়তা করে। ফসফরাস পঁাঁত ও হাড় গঠন, ফসফোলিপিড তৈরি করে। লৌহ রক্তের লােহিত রক্তকণিকা গঠন, উৎসেচক বা এনজাইমের কার্যকারিতায় সহায়তা করে। আয়ােডিন থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ ও বিপাকের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে সহায়তা করে। দেহের অধিকাংশ কোষ ও দেহরসের জন্য সােডিয়াম
প্রয়ােজন। পেশি সংকোচনে পটাশিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
খনিজ লবণের অভাবজনিত রোগ
অ্যানেমিয়াঃ
শরীরে আয়রনের অভাব হলে আয়রন ডিফিসিয়েন্সি অ্যানেমিয়া রোগ হয়। এই রকমের অ্যানেমিয়া হলে শরীর দুর্বল ও ক্লান্ত লাগার পাশাপাশি মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। সাধারণত শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের আয়রনের অভাবে অ্যানেমিয়া হয়ে থাকে। এর ফলে মহিলাদের প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি হতে পারে। প্রাণীজ আয়রন ও উদ্ভিজ আয়রন এই দুই ধরণের আয়রন পাওয়া যায়। আয়রনের অভাব পূরণের জন্য এই দুই ধরণের আয়রন গ্রহণ করা দরকার।
রিকেটস (Rikets) :
এটি কোনাে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত রােগ নয়। ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবে এ রােগ হয়।
অন্ত্রে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শােষণ, দাঁত ও হাড় গঠন প্রভৃতি শারীরবৃত্তীয় কাজে এ ভিটামিন প্রয়ােজন।
দেহের হাড়গুলাে দুর্বল হওয়া, গাঁট ফুলে যাওয়া, হাড়গুলাে বিশেষ করে পায়ের হাড় বেঁকে যাওয়া, অনেক সময় সরু হাড়গুলাে ভাজ খেয়ে যাওয়া এ রােগের লক্ষণ। এছাড়া অনেক সময় দেহের কাঠামাে ঠিক রাখা যায় না, হাড়গুলাে ভঙ্গুর
হয়ে যায় ও বক্ষদেশ সরু হয়ে যায়।
শিশুদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে। নবজাতককে কিছুক্ষণ রােদে রাখা ভালাে। এতে সূর্যালােকের অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি হয়।
0 মন্তব্যসমূহ