কলেরা রোগ কি? কলেরা রোগের চিকিৎসা কি?
কলেরা রোগের জীবাণু : Vibrio cholerae নামক ব্যাকটেরিয়া। এ ব্যাকটেরিয়ার আকৃতি একটু বাঁকা, কমার মতাে। এর দৈর্ঘ্য ১-৫ মাইক্রন এবং প্রস্থ ০.৪-০.৬ মাইক্রন। এর একপ্রান্তে একটি ফ্ল্যাজেলাম থাকে। কলেরা ব্যাকটেরিয়া একটি গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া। রবার্ট কক সর্বপ্রথম কলেরা রােগের জীবাণু আবিষ্কার করেন। কলেরা রােগের জীবাণু দেহে ক্ষুদ্রান্ত্রের মিউকাসের সাথে লেগে যায় এবং কলেরাজেন নামক টক্সিন মিশ্রিত করে। কলেরাজেন একটি এন্টারােটক্সিন।"কলেরা রোগ কি বাহিত রোগ"
কলেরা রোগের কারণঃ
বিভিন্ন কারনে কলেরা রোগ হতে পারে। নিচে কলেরা রোগের কয়েকটি কারণ দেয়া হল।
-দূষিত জল কিংবা পরিষ্কার জলের অভাবে কলেরা রোগ হওয়ার প্রবনতা অন্যতম কারণ।
-মাছি কলেরা রোগ ছড়ানোর অন্যতম বাহক।
কলেরা আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির মলমূত্র বা বমিতে বসার পর যদি একটি মাছি উড়ে এসে কোন খাওয়ার জিনিসের ওপর বসে এবং সেই খাবার যদি কেউ খেয়ে ফেলে তাহলে সেই লোকেরও কলেরায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই খোলা বা বাসি খাবার খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।"কলেরা রোগ কি বাহিত রোগ"
- নদীর জল কিংবা ময়লা আবর্জনা যুক্ত খাড়ির জলের মধ্যেও অনেক সময় কলেরার ব্যাক্টিরিয়া মজুত থাকে।
-কোনো জলাশয় বা জলের জায়গা থেকে জল পান করলে তা অনেক সময় কলেরা রোগ সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।"কলেরা রোগের অপর নাম কি"
কলেরা রােগের লক্ষণ : কলেরা রােগের প্রধান লক্ষণ হলাে প্রবল উদরাময় (ডায়রিয়া)। পায়খানার প্রথম দিকে মল থাকে, পরে
চালধােয়া পানির মতাে নির্গত হয়। রােগীর দেহে জ্বর থাকে এবং বমি হতে পারে। বমি এবং ঘন ঘন পানির ন্যায় ।
পায়খানার ফলে রােগীর দেহে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে, একই কারণে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রােগীর প্রচণ্ড পিপাসা, খিচুনি দেখা দেয়, রক্তচাপ কমে যায়, দেহ ঠাণ্ডা হয়ে আসে। রােগের প্রচণ্ডতায় রােগীর চোখ বসে যায় এবং দেহ
বিবর্ণ হয়ে যায়। চামড়া ঢিলে হয়ে যায়। ব্যাপক পরিমাণে শরীর থেকে পানি ও ইলেকট্রোলাইট হারানাের ফলে রক্তে প্রােটিনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে রােগী মারা যেতে পারে। এছাড়া রক্ত সংবহনতন্ত্র অচল হয়ে রােগীর মৃত্যু হতে পারে।"কলেরা রোগের অপর নাম কি"
কলেরা রোগ প্রতিকারের উপায় :
কলেরা রােগীর দেহ থেকে অতিমাত্রায় পানি ও লবণ বের হয়ে যায়, তাই পানি ও লবণ সমন্বয়ের জন্য শিরায় সেলাইন দেয়া হলাে উত্তম চিকিৎসা। সাথে ডাবের পানি ও খাবার সেলাইন দেয়া যেতে পারে। রােগীকে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শে অ্যান্টিবায়ােটিক ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে। মােট কথা রােগীর
দেহে যেন পানিশূন্যতা দেখা না দিতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।"কলেরা ভ্যাকসিন"
কলেরা রোগ প্রতিরােধের উপায় :
কলেরা একটি পানিবাহিত রােগ, তাই বিশুদ্ধ পানি পানের ব্যবস্থা করতে হবে। দূষিত পানি, বাসি খাবার, রাস্তার উন্মুক্ত খাবার ও পানীয় বর্জন করতে হবে। রােগীর ভেদ-বমি থেকে মাছির সাহায্যে গৌণ সংক্রমণ ঘটে, তাই খাবার সব সময় ঢেকে রাখতে হবে। রােগীর পরিধেয় কাপড়, বিছানা-পত্র পুকুর বা নদী নালায় না ধুয়ে সিদ্ধ করে রােদে শুকাতে হবে। সম্ভব হলে রােগীকে পৃথক ঘরে রাখতে হবে। কোনাে এলাকায় কলেরা দেখা দিলে সবার কলেরা ভেকসিন (টিকা) নিতে হবে। কলেরা রােগীকে প্রচুর পরিমাণে ডাবের পানি ও কলেরা সেলাইন খাওয়াতে হবে যাতে পানি ও ইলেক্ট্রোলাইটের ঘাটতি দ্রুত পূরণ হয় ।"কলেরা ভ্যাকসিন"
কলেরা সহ পানিবাহিত অন্য সকল রোগ থেকে বাঁচার জন্য সবার উচিত নিরাপদ পানি পান করা। স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেট ব্যবহার করা। সাবান দিয়ে নিয়মিত হাঁত পরিষ্কার করা। জীবানুর সংক্রামন হতে এমন খাবার না খাওয়া। নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ইত্যাদি বিষয় মেনে চললে আমরা সকল প্রকার রোগ থেকে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে বাঁচাতে পারব। পোস্টটি আপনার ভাল লেগে থাকলে শেয়ার করার অনুরোধ জানাচ্ছি। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। "কলেরা ভ্যাকসিন"
0 মন্তব্যসমূহ