বৃক্কের তাৎক্ষণিক বিকল, লক্ষণ ও করণীয়
বয়স বাড়ার সাথে সাথে বৃক্কের কাজকর্মেও (বিশেষ করে পরিস্রাবণ প্রক্রিয়ায়) পরিবর্তন ঘটে, সক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে আসে। বলা হয়ে থাকে, ৭০ বছর বয়স্ক মানুষের বৃক্ক মাত্র ৫০% কাজে সক্ষম থাকে। রােগ-ব্যাধির কারণে বৃক্কের
সক্ষমতা কমে যাওয়াকে বৃক্ক বিকল (Kidney failure) বলে। বৃক্কের বৈকল্য দুভাবে দেখা দিতে পারে, একটি হচ্ছে দীর্ঘক্ষণিক (chronic), অন্যটি তাৎক্ষণিক (instantaneous)।
বৃক্কের বৈকল্য ঘটতে যদি কয়েক বছর লেগে যায় (অর্থাৎ ধীরে ধীরে বিকল হতে থাকে) তখন তা দীর্ঘক্ষণিক বিকল। অন্যদিকে, মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যে যখন বৃক্ক দেহের বর্জ্যপদার্থ অপসারণে, পানিসাম্য ও ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য
নিয়ন্ত্রণে অক্ষম হয়ে পড়ে তখন বৃক্কের এ অবস্থাকে বৃক্কের তাৎক্ষণিক বিকল বলে ।দ্রুততম সময়ের মধ্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে রােগীর মৃত্যু হতে পারে। কারণ বৃক্ক বিকলের ফলে দেহে যে পটাশিয়াম আয়ন উৎপন্ন হয় তা হৃত্যন্ত্রের ক্রিয়াকে বন্ধ করে দেয়।
একটি কথা মনে রাখা দরকার যে মানবদেহে দুটি বৃক্ত থাকে। একটি বৃক্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্যটি যদি সুস্থ থাকে তাহলে সুস্থ বৃক্কই দুটি বৃক্কের কাজ সম্পন্ন করে।
বৃক্কের তাৎক্ষণিক বিকলের কারণ
বৃক্কের তাৎক্ষণিক বিকলের কারণগুলাে হচ্ছে-
(i) ডিহাইড্রেশনের কারণে দেহে পানির পরিমাণ যথেষ্ট কমে গেলে;
(ii) বড় কোনাে ক্ষত থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে বৃক্কে রক্ত প্রবাহ কমে গেলে
(iii) অতিমাত্রায় ডায়ারিয়া ও বমির
কারণে;
(iv) শক, হার্ট অ্যাটাক, অ্যাকিউট প্ল্যানক্রিয়াটাইসিস, ভুল রক্ত দেয়ার জন্য, সাংঘাতিকভাবে পুড়ে যাওয়ার কারণে, রক্ত প্রবাহ কমে গেলে;
(v) বৃক্কে পাথর, মূত্রনালিতে টিউমার বা জন্মগত ত্রুটি থাকলে, পুরুষে প্রােস্টেট গ্রন্থি
বড় হয়ে গেলে, উদরে ক্যান্সার হলে;
(vi) অতি মাত্রায় অ্যান্টিবায়ােটিকস (যেমন-জেন্টামাইসিন, স্ট্রেপ্টোমাইসিন),
ব্যাথানাশক ঔষধ (যেমন-আসপিরিন, আইবুপ্রােফেন), রক্তচাপের ঔষধ (যেমন-এসিই ইনহিবিটর) সেবনে
(vii)বিষাক্ত পদার্থ, যেমন কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, আর্সেনিক, লেড, মার্কারি ইত্যাদি গ্রহণে; (viii) বৃক্কের টিস্যু ও পরিস্রাবক এককগুলাে ক্ষতিগ্রস্ত হলে।
বৃক্ক বিকলের লক্ষণ
তাৎক্ষণিক বৃক্ক বিকল-এর লক্ষণগুলাে হচ্ছে : অতি অল্প, ঘন ও গাঢ় মূত্র ত্যাগ বা মূত্র একেবারেই না হওয়া; রক্তে নাইট্রোজেনজাত বর্জ্যপদার্থ সঞ্চিত হওয়া; শরীর ফুলে যাওয়া (অতিরিক্ত পানি মূত্র হিসেবে দেহে থেকে যাওয়ায়); পাঁজর ও কোমরের মাঝামাঝি দুপাশে ব্যথা (flank pain); ক্ষুধামান্দ্য, বমি-বমিভাব ও বমি করা; উচ্চ রক্তচাপ; রক্ত পায়খানা;
হাত-পায়ে সংবেদ কমে যাওয়া; অনেকক্ষণ ধরে হেঁচকি তােলা; ঘন ঘন শ্বাস প্রভৃতি।
বৃক্ক বিকলের প্রতিকার | করণীয়
বৃক্ক বিকল অত্যন্ত জটিল রােগ। তাৎক্ষণিক বৃক্ক বিকল আরও জটিল বিষয়। তাই এ রােগের প্রতিকার করতে হলে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। লক্ষণের দু-একটি বৈশিষ্ট্য দেখেই খাদ্য ও পথ্য বিষয়ে নিজে থেকে কোনাে সিদ্ধান্ত গ্রহণ
জীবনের জন্যে মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। শুধু তাই নয়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া অন্য কাউকে দিয়ে এ রােগের চিকিৎসার আরেক অর্থ হচ্ছে অর্থ দিয়ে অনর্থ” ডেকে আনা।
বৃক্ক বিকলের প্রতিকারে বিশেষজ্ঞরা ৩টি পন্থার কথা উল্লেখ করেছেন- ১. নিয়ন্ত্রিত আহার, ২. ডায়ালাইসিস এবং ৩, বৃক্ক প্রতিস্থাপন।
বৃক্ক বিকলের প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন
0 মন্তব্যসমূহ