আন্ত্রিক সমস্যাজনিত রোগ সম্পর্কে জেনে নিন

আন্ত্রিক সমস্যাজনিত রোগ সম্পর্কে জেনে নিন 


আন্ত্রিক সমস্যাজনিত রোগ সম্পর্কে জেনে নিন

আন্ত্রিক সমস্যার কারণে কখনও কখনও নিম্নলিখিত রােগ বা শারীরিক অসুবিধা দেখা দেয় যেমন


অজীর্ণতা : আন্ত্রিক রোগ কি একে আমরা বদহজমও বলে থাকি। নানা কারণে বদহজম হয় বা হজমে ব্যাঘাত ঘটে। যেমন- পাকস্থলিতে সংক্রমণ, বিষন্নতা, অগ্ন্যাশয় রােগ, থাইরয়েডের সমস্যা, এনজাইমের ঘাটতি, ডায়াবেটিস ইত্যাদি।আন্ত্রিক রোগের কারণ

পেটের উপরের দিকে ব্যথা, পেট ফাঁপা, পেট ভরা মনে হওয়া, বুক জ্বালা করা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, বুক ব্যথা,

টক ঢেকুর উঠা ইত্যাদি অজীর্ণতার লক্ষণ। 


পাকস্থলি বা অন্ত্রের আলসারের কারণেও হজমে অসুবিধা দেখা দিতে পারে।


অজীর্ণতা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যা করতে হবে তা হলাে- 


অতি ভােজন না করা, আস্তে আস্তে উত্তমরূপে খাবার চিবিয়ে খাওয়া, ধূমপান পরিহার করা। আন্ত্রিক রোগের লক্ষণ প্রয়ােজনে অজীর্ণতার কারণ নির্ণয় করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা।


আমাশয় (Dysentery) : Entamoeba histolytica নামক এক প্রকার প্রােটোজোয়া এবং সিগেলা (Shigella) নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে আমাশয় হয়।

ঘন ঘন মলত্যাগ, মলের সাথে শ্লেম্মা বের হওয়া, পেটে ব্যথা, আন্ত্রিক রোগের লক্ষণ অনেক সময় শ্লেযুক্ত মলের সাথে রক্ত যাওয়া ও দুগ্ধজাত দ্রব্য হজম না হওয়া আমাশয় রােগের লক্ষণ।


এ রােগ প্রতিকারে যা করতে হবে তা হলাে- 


বিশুদ্ধ পানি পান করা, শাকসবজি ও ফলমূল উত্তমরূপে পানি দিয়ে ধৌত করা, মল ত্যাগের পর হাত সাবান বা ছাই দিয়ে উত্তমরূপে ধৌত করা, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করা, খাওয়ার

আগে হাত ও থালাবাসন উত্তমরূপে ধুয়ে নেওয়া।আন্ত্রিক রোগের লক্ষণ প্রয়ােজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

সময়মতাে চিকিৎসা না করা হলে মারাত্মক কিছু ঘটতে পারে।


কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation): এটি কোনাে বিশেষ ধরনের রােগ নয়। যখন কারাে শক্ত পায়খানা হয় অথবা দুই বা তারও বেশি দিন পায়খানা হয়না এ অবস্থাকে বলা হয় কোষ্ঠকাঠিন্য। বিভিন্ন কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে, যথাপায়খানার বেগ চেপে রাখলে, কোলন অপাচ্য খাদ্যাংশ থেকে অতিমাত্রায় পানি শােষণ করলে, পৌষ্টিক নালির মধ্য দিয়ে।

খাদ্যের অপাচ্য অংশ ধীরে ধীরে গমনে মল থেকে বেশি পানি শােষিত হলে, পরিশ্রম না করলে, আন্ত্রিক গােলযােগে, কোলনের মাংসপেশি আস্তে আস্তে সংকুচিত হলে, রাফেজ বা আঁশযুক্ত খাবার না খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়।

কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে মল ত্যাগ কষ্টদায়ক হয়। ফলে পেটে অস্বস্তিকর অবস্থা, পেট ব্যথা ও নানা রকম আনুষঙ্গিক অসুবিধার সৃষ্টি হয়।


এ রােগ প্রতিকারে যা করতে হবে তা হলাে- 


আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া, প্রচুর পানি পান করা, নিয়মিত শাকসবজি, নারকেল, খেজুর, আম, কমলা, পেঁপে, আনারস, চা, কলা ইত্যাদি খাওয়া। নিয়মিত মল ত্যাগের অভ্যাস করা, হাঁটা

চলার অভ্যাস গড়ে তােলা।


গ্যাস্ট্রিক আলসার (Gastric ulcer) : আলসার হলাে পাকস্থলির বা অন্ত্রের প্রদাহ বা ক্ষত। দীর্ঘদিন ধরে খাদ্যগ্রহণে অনিয়ম হলে পাকস্থলিতে অম্লের আধিক্য ঘটে।কৃমিজনিত রোগ অনেক দিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলে পাকস্থলি বা অন্ত্রে ক্ষতের সৃষ্টি হয়, তখন একে গ্যাস্ট্রিক আলসার বলে।

এ রােগে পেটের ঠিক মাঝখানে একঘেয়ে ব্যথা অনুভব হয়। খালিপেটে বা অতিরিক্ত তেলজাতীয় খাদ্য খেলে ব্যথা বাড়ে।

আলসার মারাত্মক হলে বমি হতে পারে। কখনও কখনও বমি ও মলের সাথে রক্ত নির্গত হয়। এন্ডােসকপি (Endoscopy) বা বেরিয়াম এক্স-রে এর মাধ্যমে এ রােগ নির্ণয় করা যায়।


এ রােগ প্রতিকার করতে হলে যা করতে হবে তা হলাে-


 নিয়মিত সহজপাচ্য খাদ্য গ্রহণ করা, অধিক তেল ও মশলাযুক্ত গুরুপাক খাদ্য পরিহার করা। ফুটানাে দুধ, পনির এবং কলা খেলে ভালাে উপকার পাওয়া যায়। কৃমিজনিত রোগ নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ করে,

কফি, সিগারেট ইত্যাদি উত্তেজক পদার্থ গ্রহণ থেকে বিরত থেকে, প্রয়ােজনে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিয়ে এ রােগ প্রতিরােধ করা সম্ভব।


অ্যাপেনডিসাইটিস (Appendicitis) : পেটের ডান দিকের নিচে বৃহদন্ত্রের সিকামের সাথে অ্যাপেনডিক্স যুক্ত থাকে।

এটি আঙ্গুলের আকারের একটি থলে। অ্যাপেনডিক্সের সংক্রমণের কারণে অ্যাপেনডিসাইটিস হয়। এ রােগে নাভির চারদিকে ব্যথা অনুভব হয় এবং ব্যথা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তা নিচে ডান দিকে সরে যায়। ক্ষুধামন্দা, বমি, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।

এ রােগের প্রতিকারে রােগীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তার দেখাতে হবে। কৃমিজনিত রোগ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রােগীকে হাসপাতালে ভর্তি ও প্রয়ােজনে শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে অ্যাপেনডিক্স অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে। অ্যাপেনডিক্সে

সক্ৰমণ মারাত্মক হলে এটি ফেটে যেতে পারে এবং রােগীর জন্য মারাত্মক অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে, এমনকি মতা পর্যন্ত

হতে পারে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ